দেবী লক্ষ্মীর আবির্ভাবের কাহিনী সম্পর্কে জানুন
প্রদীপ কুমার সাঁতরা :- হিন্দু শাস্ত্র মতে, বৃহস্পতিবার হল দেবী লক্ষ্মীর আরাধনার দিন। এই দিনে দেবী লক্ষ্মীর আবির্ভাবের কাহিনী শ্রবণ করা শুভ।
দেবী লক্ষ্মীর আবির্ভাব বা উৎপত্তির কাহিনী :--
সমস্ত হিন্দু শাস্ত্র, যেমন - ভাগবত, মহাভারত, বিষ্ণু পুরাণ প্রভৃতি গ্রন্থ অনুযায়ী দেবী লক্ষ্মীর আবির্ভাব ঘটেছে সমুদ্র থেকে। স্বর্গ একদা লক্ষীছাড়া বা শ্রীহীন হয়েছিল দুর্বাসা মুনির অভিশাপে। স্বর্গের ঐশ্বর্য পুনরায় ফিরে পাওয়ার জন্য বিষ্ণু দেবের পরামর্শ অনুযায়ী দেবগন ও অসুর গণ একসাথে সমুদ্র মন্থন শুরু করেন। ক্ষীর - সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠে আসে অমৃত সুধা। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মণি মাণিক্য, রত্ন, ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। এই সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠেছিলেন দেবী লক্ষ্মী এবং তিনি স্থান নিলেন বিষ্ণুর বক্ষে। সমুদ্র থেকে আবির্ভাব এর ফলে দেবী লক্ষ্মীকে বলা থাকে সমুদ্র কন্যা। ধনরত্ন পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য সমুদ্রকে বলা হয়ে থাকে রত্নাকর।
দেবী লক্ষ্মী হলেন সৌভাগ্যের দেবী। তিনি হলেন ধন-সম্পদ ও সৌন্দর্যের প্রতীক। দেবী লক্ষ্মী হলেন ত্রি - গুনাত্তিকা প্রকৃতির রজোগুণের প্রতীক। সত্যগুন সর্বশেষ্ঠ, রজোগুণ মধ্যম এবং তমোগুণ সব থেকে নিকৃষ্ট। আমাদের জীবন ধারণের জন্য এই তিনটি গুণই অতি আবশ্যক। আমরা সংসারী জীব, তাই সংসারী মানুষদের কেবল সত্য গুন আশ্রয় করলে হয়না রজোগুণের ও বিশেষ প্রয়োজন হয়। বিষ্ণুদেব রজোগুণের দ্বারা প্রাণীকূলকে পালন করে থাকেন। বিষ্ণুদেব যে শক্তি দ্বারা জগতকে পালন করছেন সেই শক্তি হলেন দেবী লক্ষী। প্রকৃতিকে বা শক্তিকে আমরা নারী রূপে পত্নীরূপে কল্পনা করে থাকি। তাই দেবী লক্ষ্মী হলেন বিষ্ণুপত্নী।
আমাদের আচার আচরণে প্রকৃতির বিচারে দেবী লক্ষ্মী আমাদের গৃহে বিরাজ করে থাকেন। যাদের গৃহে মিথ্যাবাদী ব্যাক্তি, দুর্বল চেতা, দুঃখ শীল, সব সময় কেবল নাই নাই বলে, সত্য হীন, দীক্ষা হীন, মন্দ বুদ্ধি সম্পন্ন, ঈশ্বরের পূজা-অর্চনায় বিমুখ, শয়নের পূর্বে যারা পা ধোয় না, বেশি ঘুমায় বা প্রভাতে, সায়ান্নে বা দিনে নিদ্রা যায়, যাদের দাঁত অসংস্কৃত, পরিধেয় বস্ত্র মলিন তাদের গৃহে দেবী লক্ষী কখনো গমন করেন না।
যে সকল গৃহে কলহ নাই, ধানের বর্ণ স্বর্ণের মতো, চাল রুপার মতো এবং অন্ন তুষ হীন। যে সকল গৃহে ভোগ্য বস্তু সমান ভাগে ভাগ করে ভোগ করা হয় , যারা মিষ্টভাষী, ধার্মিক, বিদ্বান, সেবাপরায়ণ, পরকে যন্ত্রণা দেন না, দ্রুত আহার করেন, ফুল তোলার পর গন্ধ নেন না, পরস্ত্রী পরিদর্শন করেন না, সংযত, সেই ব্যক্তির গৃহেই দেবী লক্ষী বসবাস করেন।
দেবী লক্ষ্মীর বাহন হলো পেঁচা। পেঁচা হল দেবী লক্ষ্মীর সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মের। যারা শুধুই অর্থলোভী হন, অর্থের চিন্তায় মগ্ন থাকেন, তারা ওই প্যাঁচার মতোই অন্ধত্ব লাভ করবেন। জ্ঞানের আলো কখনোই তাদের অন্তরে প্রবেশ করতে পারবে না। পেঁচা যেমন কালো অন্ধকারে পথ চলে, তেমনি ধন সম্পত্তির লোভে - র শিকার হয়ে তেমনি কালো পথে অর্থাৎ অসৎ পথে ধাবিত হয়। যিনি ভক্তি ধন অন্বেষণ করবেন, তিনিই দেবীর আশীর্বাদ লাভ করবেন।
No comments:
Post a Comment