ওয়েব ডেস্ক :- পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাঘানালাতে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও আশ্বিনের সংক্রান্তির আগের দিন মঙ্গলবার, সতেরো অক্টোবর সারা রাত ব্যাপী সাড়ম্বরে পূজিতা হলেন মাজী পরিবারের কুলো মা "ডাকিনী মনসা"। পুজোর প্রাচীন ইতিহাস জানা না গেলেও পরিবার সূত্রে জানা যায়, কুলো গুরু বাদল দন্ডির নির্দেশে নতুন করে পুজো শুরু হয় তেরোশো বাষট্টি বঙ্গাব্দে।
তবে কথিত আছে, অনেক আগে থেকেই মা কে অনুভব করতে পেরেছিলেন আশেপাশের অনেকেই, ঘটত নানান অলৌকিক কাহিনী। তখন ছিল একান্নবর্তী পরিবার। জোত্যিষবিদ্ সন্তোষ জানা আসতেন বাড়ির মেজোকর্তা তুষ্টরাম মাজী কে জোত্যিষবিদ্যা শেখাতে ও চর্চা করতে। সঙ্গে যোগ দিতেন সনাতনী ধার্মিক নানান বিশিষ্টরা এছাড়াও আসতেন বিখ্যাত কবিরাজ ক্ষুদিরাম পাঠকও। চলত জোত্যিষচর্চা, হরিনাম সংকীর্তন ও ধর্ম আলোচনা।
এককথায় মাজী পরিবারে বরাবরই ধর্ম আলোচনার আসর বসত। সেই আসরেই কুলো গুরু তুষ্টরাম মাজী কে নির্দেশ দেন বাড়ির সবাই মিলেই মা এর পুজো শুরু করার। তিনি জানতে পারেন অনেক কাল আগে থেকেই মা ওখানে পুজো নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। সেই থেকেই শুরু কুলো মা এর পুজো। আসতে আসতে ছড়িয়ে পরে মা এর মহিমা সেই সময় থেকেই দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন রোগ জ্বালা নানান সমস্যা নিয়ে মনের বিশ্বাস থেকে তারা সকলেই নাকি সেরে উঠতেন।
কখনো মা এর পচ্ছন্দের আখ খেতে চাওয়ার বায়না, কখনো প্রস্যন্ন হওয়ার স্বপ্ন, অনুভবে নানান ভাবেই ধরা দেন তিনি। তবে শুধুমাত্র ঘটে পুজো একদমই তিনি পচ্ছন্দ করেন না। যত ছোটোই হোক না কেন ঠাকুর যেন গড়া হয় এটাই নাকি আবদার মা এর। কথিত আছে, সংসারের দুঃসময়ে ঘটে পুজোর চিন্তাভাবনা নিলেও অঘটন ঘটে যাওয়ার ফলে নিজেরাই হাতে গড়ে ফেলেন ছোট্টো প্রতিমা আবার পুনরায় সেই মূর্তি তে পুজো করেন। তখন ভয়াবহ বন্যার পরিস্থিতি। পরে পরে তৈরি হয় কুলো মা এর মন্দির। সবই মা এর স্বপ্নাদেশেই। মা এর বাহন সর্পকে ভালোবাসার নির্দেশ রয়েছে কড়াকড়ি ভাবে। না হলেই রুষ্ঠ হন দেবী। তার ফল হয় মারাত্মক সেসব ঝড়ও বয়ে গেছে পরিবারের ওপর। তবে অন্ন বস্ত্রের অভাব হয় না পরিবারের কখনোই।
মা এর আর্শিবাদে পরিবারের সকলেই প্রতিষ্ঠিত তাই সাড়ম্বরেই প্রতিবছর পুরোনো ঐতিহ্য মেনেই বৈষ্ণব মতে সারারাত ব্যাপী চন্ডিপাঠ ও হোম যজ্ঞসহযোগী ঢাককাশর বাজিয়ে সাড়ম্বরে আরধনা হয় কুলো মা ডাকিনী মনসার।
যাঁদের হাত ধরে পুজো শুরু আজ আর তাঁরা না থাকলেও কুলু গুরুর নির্দেশে পুজো চলছে পরম্পরা বজায় রেখেই। এখন আরাধনা করেন অজিত মাজী, গৌর মাজী ও নিতাই মাজী তিন ভাই মিলে। সঙ্গে এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও। যে যেই প্রান্তেই থাকুক না কেন মা এর টানে পুজোই প্রত্যেকেই মিলিত হয়। পারিবারিক পুজো হলেও ছুটে আসেন আশেপাশের গ্রামবাসী ও মানিসকের পুজো দিতে আসেন মা এর কৃপালাভ করা ব্যাক্তিত্বরাও। যদিও পরিবারের মতে সবটাই মা এর কৃপা ও প্রত্যেকের আবেগ।
এই প্রজন্মের বড়ো ছেলে বিশিষ্ট শিক্ষক সেট গোপাল মাজী বলেন, মা এর কাহিনী এককথায় বলা অসম্ভব। তার মহিমা অপার তাই প্রতিবছরই প্রচুর মানুষ আসেন। পারিবারিক পুজো হলেও মা সকলের। সারারাত ব্যাপী বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। কুলো গুরুর নির্দেশ আছে এ পুজো কোনোভাবেই যাতে বন্ধ না হয়, এখন বাবা ও কাকারা মিলে করে এরপর আমার ও ভাইদের দায়িত্ব নেওয়ার পালা।
শুনেছি মা স্বপ্নাদেশে কুলো গুরুদেব ও জোত্যিষবিদ সন্তোষ জানা ও ক্ষুদিরাম পাঠক এ পুজো শুরুর মূল কান্ডারী আমরা উপলক্ষ্য মাত্র। স্বয়ং মা এর অনেক অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী আমরা তা এককথায় বর্ননা অসম্ভব। তবে মা আছেন হৃদয়ের অন্তস্থলে। এটা আবেগ অনুভব করলেই এর অস্তিত্ব মেলে"। সবমিলিয়ে নির্বিঘ্নে ঐতিহ্য মেনেই সমাপন হয় এবছরের পুজো।
No comments:
Post a Comment