Breaking

Sunday, July 9, 2023

গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ উৎসবের দিন আদৌ কি বিন্দু মাত্র রক্ষা পেয়েছে গণতন্ত্র ?

নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল :- গত শনিবার, ৮ ই জুলাই, রাজ্যে হয়ে গেলো ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন। তবে গণতন্ত্রের উৎসবের দিন, গনতন্ত্র কতটা রক্ষা পেলো সে প্রশ্ন থাকবেই? কেন্দ্র বাহিনী দিয়ে নাকি হবে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন ! কিন্তু কোথায় বাংলার অধিকাংশ বুথে দেখাই মিলল না সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর। তাই রাজ্য পুলিশ দিয়েই হলো পঞ্চায়েত ভোট। 

আর শনিবার ভোটের দিন সকাল থেকেই বিক্ষিপ্ত ঘটনার খবর আসতে থাকে। সকালেই আসানসোলের সালানপুরের ব্লকের বেশ কিছু বুথে বিরোধী দলের কোনো পোলিং এজেন্ট দেখা গেলো না। আর প্রতিটি বুথে দেখা গেলো কেবল একজন করে সশস্ত্র কনস্টেবল রাজ্য পুলিশ। অন্যদিকে জামুরিয়ায় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাহাদুরপুর উচ্চ বিদ্যালয় ২০৬ ও ২০৭ নম্বর বুথে নেই কোন কেন্দ্রীয় বাহিনী। দুটি বুথে একজন করে মহিলা কনস্টেবল দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে রয়েছেন দুজন সিভিল ভলেন্টিয়ার। প্রিজাইডিং অফিসার আশঙ্কা প্রকাশ করেন এনিয়ে। 

তবে ভোটের দিন রূপনারায়ানপুরের পিঠা কেয়ারী অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনটি বুথেই দেখা মেলে কেন্দ্র বাহিনী। সালানপুর ব্লকের বাসুদেবপুর গ্রামপঞ্চায়েতর ভোট কেন্দ্রেও দেখা যায় কেন্দ্রীয় বাহিনী! অন্যদিকে পোলিং এজেন্টকে তাড়িয়ে, বিজেপি প্রার্থীকে মারধর। একজন কনস্টেবলকে রাখা হয়েছে বুথ এলাকায়, নেই কোনো কেন্দ্রীয় বাহিনী। পশ্চিম বঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার রানিগঞ্জ ব্লকের জেমারি পঞ্চায়েত ক্ষেত্রে ভোটের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে শনিবার সকালে এই রকমই দৃশ‍্য ফুটে উঠেছে। এখানে মাত্র একজন কনস্টেবলের সহযোগিতায় ভোট প্রক্রিয়া সচল রাখা হয়। কোনো কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি চোখে পড়েনি।জেমারি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বুথ নং ২৪৭ জেমারি বেলিয়া বাথান কমিউনিটি সেন্টারে বিজেপি প্রার্থীকে মারধর করা হয়েছে। একই সাথে তার পোলিং এজেন্টকেও মেরে ভাগিয়ে দেওয়া হয়। বেলিয়া বাথান কোড়া পাড়া অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই ভাবে যদি ধমকি হুমকি দিয়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরী করা হয় তাহলে তারা ভোট দিতে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ বুথে কোনো কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই। 
আবার কাঁকসা থানার বনকাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২১ নম্বর বুথে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা। সিপিএম প্রার্থী প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। আহত হয় একজন প্রার্থী। সিপিএম ও বিজেপি ক্ষিপ্ত হয়ে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেয়। প্রায় আধাঘন্টা ভোট বন্ধ থাকার পড়ে পুলিস আশ্বাসে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ওই বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না করাই ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী।

দুর্গাপুর জেমুয়ায় ভোটারদের প্রভাবিত করে জোরপূর্বক শাসক দলে ভোট করানোর অভিযোগ তৃণমূল নেতার আমির হোসেন এর বিরুদ্ধে। যদিও আমির হোসেনের দাবি, তার স্ত্রী এবং পরিচিত যারা নিজেরা ভোট দিতে সক্ষম নয় তাদেরকেই সাহায্য করছে৷ সিপিএমের অভিযোগ, এই আমির হোসেন বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশকে আগেও অভিযোগ জানানো হয়েছিল কারণ প্রার্থী ঘোষনার পর প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এই ঘটনা কি প্রাসাইডিং অফিসার পুরো ঘটনা অস্বীকার করেন। 

চলবলপুর ফ্রী প্রাইমারি স্কুলে ৩৩ নাম্বার বুথে বুথ দখল করতে আসা তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের হটিয়ে দিল সিপিএমের কর্মী সমর্থকরা প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তারা তাড়িয়ে দিল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের। পশ্চিম বর্ধমান আসানসোল রানীগঞ্জ ব্লকের জে কে নগর চলবলপুরে ৩১ ৩২ এবং ৩৩ নম্বর বুথে ছাপ্পা ভোতের অভিযোগ তোলে সিপিআইএম। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা, সিপিএমের ইলেকশন এজেন্ট উজ্জ্বল একুড়িয়া গুরুত্বর আহত হয়। তার মাথা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ তৃণমূলের দিকে। অবশ্য তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করে। 

দোমহানি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শ্যামসুন্দরপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় সকাল থেকে নির্বিঘ্নে ভোট চলছিল হঠাৎ ১২ টা ৩০ মিনিট নাগাদ ভোট কেন্দ্র হঠাৎই অশান্ত হয়ে পড়ে। সিপিএমের কিছু বহিরাগত ছেলে এসে ভেতরে ঢুকে বুকের ভেতরে ঝামেলা পাকাতে আরম্ভ করে তারপরে অশান্ত হয়ে পড়ে ওই চত্বরটি। ঘটনার খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে নিয়ন্ত্রণে আনে। 

জামুরিয়ার হিজলপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের লালবাজার ১৬৯ নম্বর বুথে বিজেপি ও তৃণমূল সংঘর্ষ ঘটনায় আহত বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী। বিজেপির অভিযোগ সকাল বারোটা পর্যন্ত ঠিকঠাক ভোট চলছিল কিন্তু প্রচুর সংখ্যক বহিরাগত এসেছে বুথ লুট করার চেষ্টা করে। তারা প্রতিবাদ জানালে তাদেরকে বেধড়ক মারধর করা হয় পোলিং এজেন্টকে বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়। প্রায় ঘন্টা দেরেক তারা লুটপাট চালায়। 

রানীগঞ্জ ব্লকের জে কে নগর জেমারি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথ নম্বর ২৩৮ ২৩৯ ২৪০, এখানে ব্যাপক উত্তেজনা, গুলি চালানোর অভিযোগ তৃণমূল এর দিকে, অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূলের। অন্য দিকে এক তৃণমূল নেতার মাথা ফাটালো সিপিআইএম বলে অভিযোগ। 

ভোটের শেষ বেলায় উত্তেজনা পশ্চিম বর্ধমান জেলার সালানপুর ব্লকের দোমহানি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে। ৯২ নাম্বার বুথে সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ চলছিলো তবে দুপুর ১:৪০ নাগাদ বেশকিছু বহিরাগত ব্যক্তি বুথে ঢুকে হুমকি দিতে থাকে এবং ভোটকর্মীদের চুপচাপ বসতে বলে এবং ছাপ্পা ভোট দিতে থাকে। তবে তাদের বাধা দিতে গেলে দুষ্কৃতীরা তিনটি ব্যালট বাক্স ভোট কেন্দ্রের সামনে পুকুরে ফেলে দেয় বলে জানান ফাস্ট পোলিং অফিসার। গোটা ঘটনার অভিযোগ উঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। এর পরেই ঘটনাকে ঘিরে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক উত্তেজনা। বন্ধ হয়ে যায় ভোট গ্রহণের কাজ।ঘটনাকে ঘিরে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এলাকার মানুষের মধ্যেও। ক্ষোভের আচ গিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল নেতা নেত্রীর বাড়িতে চালানো হয় ব্যাপক ভাঙচুর।পরে ঘটনাস্থলে আসে বিশাল পুলিশ বাহিনী। শেষ পর্যন্ত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে এই বুথে বিকেল ৫টা নাগাদ পূনরায় ভোট গ্রহণ চালু হয়। তবে অন্যদিনে তৃণমূল নেতাদের পাল্টা অভিযোগ তাদের বাড়িতে বিজেপির দুষ্কৃতীরা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। 

সব মিলিয়ে কয়েক জায়গায় শান্তি পূর্ণ ভোট গ্রহণ হলেও বেশিরভাগ বুথেই অশান্তি, ভোট লুট, ছাপ্পা ভোট, মারামারি, রক্তারক্তির ঘটনা দেখা যায়। তাহলে বাংলা কি রক্তপাত শূন্য নির্বাচন দেখতে পারবে না। প্রশ্ন থাকলো আমাদের ? 


No comments:

Post a Comment

Adbox