ডেস্ক রিপোর্ট, আমার কলম :- হিন্দু সনাতন ধর্মের আদি দেবতা হিসেবে পূজিত হন দেবাদিদেব মহেশ্বর। শুধুমাত্র ভারত নয়, পৃথিবীর প্রায় সিংহভাগ দেশে শিবের পূজা করা হয়।
তবে ভারতীয় উপমহাদেশে শিব পূজার প্রচলন একটু বেশি। তবে জানেন কি, এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শিবলিঙ্গ কোথায় রয়েছে? এটি রয়েছে এই পশ্চিম বাংলায়।
নদীয়া জেলার সদর শহর কৃষ্ণনগরের চূর্ণী নদীর তীরে অবস্থিত রাজরাজেশ্বর শিব মন্দির।
কথিত আছে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই মন্দির। মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৩৬ ফুট। প্রতি শ্রাবণ মাসে ভক্তদের ঢল উপছে পরে এই মন্দিরে।
জেলা তো বটেই ভিন রাজ্য থেকেও ভক্ত সমাগম হয়, মন্দিরে পূজা দেওয়ার জন্য।
কুমারী থেকে বিধবা মহিলারা সারাদিন উপবাস থেকে ভক্তি ভরে বাবা বুড়ো শিবের মাথায় জল ঢালেন।
এত বড় শিবের মাথায় জল ঢালতে হয় সিঁড়ির উপর থেকে। মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিয়েও নানা জনের নানা মত।
একবার বর্গী আক্রমণে সন্ত্রস্ত কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। এমন সময় তার কুলপুরোহিত রঘুনাথ মিশ্র তাকে আদেশ দেন চুনি ও ইছামতি নদীর সংযোগস্থলে একটি শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে।
কারণ বর্গীরা ছিলেন শৈব পূজারী। তাই যে স্থানে স্বয়ং মহাদেব থাকবেন সেখানে তারা আক্রমণ করবেন না।
অলৌকিকভাবে, বর্গী আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পান মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র। এরপর তিনি নবদ্বীপের গঙ্গা থেকে জল নিয়ে এসে মহাদেবের অভিষেক সম্পন্ন করেন।
সেই শুরু, তারপর আড়াইশো বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছেন বাবা বুড়ো শিব।
এই মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ১২০ ফুট। আগে ১৮০ টি মন্দির থাকলেও এখন মাত্র তিনটি মন্দির অবশিষ্ট। এই মন্দিরে রয়েছে ঠাকুরদালান নাট মন্দির এবং গম্বুজ, আপাতদৃষ্টিতে দেখলে গির্জা মনে হতে পারে।
অগুনতি ভক্ত শিবরাত্রি শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার, নীল পূজা ও চরকের সময় নদীর ঘাট থেকে পায়ে হেঁটে বাবার মাথায় জল ঢালতে আসেন।
এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শিব মন্দির নিয়ে, প্রচলিত আছে এক প্রবাদ, শিবনিবাস তুল্য কাশি ধন্য নদী কঙ্কনা।
প্রসঙ্গত চূর্ণী ও ইছামতি নদীর মধ্যবর্তী এই নদীর নাম কঙ্কনা। ভক্তদের বিশ্বাস, কোষ্ঠী পাথরের এই শিব লিঙ্গে জল ঢাললে, শত্রু বিনাশ , রোগ মুক্তি, এমনকি দীর্ঘায়ু প্রাপ্তি হয়।
কেদারনাথ, অমরনাথ কিংবা কাশী বিশ্বনাথের তুলনায় কোনো অংশে কম নয় কৃষ্ণনগরের শিবনিবাস।


No comments:
Post a Comment