রামকৃষ্ণ চ্যাটার্জী, আসানসোল : রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক সিটে জয়ী হয়ে পুনরায় শাসন ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর তারপর কয়েক মাস আগে কলকাতা পৌর নিগম নির্বাচনেও সমগ্র কলকাতা জুড়ে রেকর্ড সংখ্যক ভোটে জয়যুক্ত হয়ে কলকাতার লাল বাড়িতে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর এবার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১২ তারিখে আসানসোল পৌর নিগম সহ মোট চারটি পৌর নিগম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। আর এই নির্বাচনী আবহাওয়ায় বিজেপিতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রত্যেক এলাকার বিজেপি নেতা ও কর্মীরা একে একে যোগদান করছে তৃণমূল কংগ্রেসে।
আসানসোল শহরের দীর্ঘদিনের লড়াকু বিজেপি নেত্রী স্বপা মুখার্জী। বিগত ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি আসানসোল বিজেপি মন্ডল - ৩ এর মহিলা মোর্চার সভাপতির দায়িত্বভার নিয়ে পদ্মফুলের জন্য কাজ করেছিলেন। কিন্তু হটাৎ কি ঘটলো যে তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করলেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখে বিজেপির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে রাজ্যের ক্ষমতাশীল দল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন।
আর বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান কেনো করেছেন, তার উত্তরও নিজের মুখেই দিলেন স্বপ্না মুখার্জী। তিনি জানান, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দেখে, ওনার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি বিজেপিতে যোগদান করেছিলাম। আমার দিন রাত বলে কিছু ছিল না। আমি বিজেপি কর্মী হিসেবে নিজেকে যতটা পেরেছি, কাজ করে গেছি। লোকসভা নির্বাচনে আমরা সবাই বিজেপি কর্মীরা পরিশ্রম করে আমাদের এখানকার সাংসদ বাবুল সুপ্রীয়কে জেতালেন। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কর্মীরা সবাই ভালো কাজ করেছিল। এরপর বিধানসভা নির্বাচনে আসানসোল উত্তরের বিজেপি প্রার্থী হলেন কৃষ্ণেন্দু মুখার্জি। কিন্তু দেখা গেলো আমরা যারা পুরোনো কর্মী ছিলাম, তাদের দিনের পর দিন বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা সত্বেও আমরা কাজ করে যাচ্ছিলাম বিজেপিতে। কিন্তু আসানসোল কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী করা হলো কাজের মানুষদের নয়, কাছের মানুষদের। আমি আসানসোল উত্তরের মন্ডল - ৩ এর মহিলা মোর্চার সভাপতি ছিলাম। এই অঞ্চলের যেসব মহিলাদের বিজেপি প্রার্থী করা হয়েছে, তাদের আমরা চিনিই না, তারা কোনো দিন বাড়ি থেকে বেরোয়নি, মানুষের জন্য কাজ করেনি। পশ্চিম বর্ধমান এর বিজেপি জেলা সভাপতি দিলীপ দে, আমাদের অনেক কর্মীকে, আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন।
স্বপ্না মুখার্জী বিজেপির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো জানান, বিজেপি মাতৃ শক্তির কথা বলে, কিন্তু বিজেপির সক্রিয় মহিলা কর্মীদের দিনের পর দিন বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মাতৃ শক্তি কথা বলা হলেও এই দলে মাতৃ শক্তির অপমান করা হয় ও তাদের দমন করা হয়। তাই আমি অবশেষে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করি। বিজেপি থেকে টিকিট না পাওয়ার জন্যই কি তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছেন? এই প্রশ্নের উত্তর ও পাওয়া গেলো তারই মুখে। তিনি জানান, বিজেপির হয়ে অনেক দিন কঠোর পরিশ্রম করে গেছি। কিন্তু তা সত্বেও আমি প্রার্থী হয়নি, তার জন্য ক্ষোভ বা দুঃখ একটা তো আছেই। কিন্তু সব থেকে প্রধান কারণ হলো আমাদের দলে কোনো সম্মান ছিলনা। তাই আমি দল ছাড়তে বাধ্য হই। আমরা দলে থেকে অনেক কিছু জেনে যাচ্ছিলাম। তাই আমাদের বসিয়ে সাইট করে দেওয়া হচ্ছিল। আমি পদ চাইনি বিজেপিতে, কিন্তু কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছিল না মানুষের জন্য।
তিনি আরো জানান, আমি নতুন দলে যোগদান করে খুবই সম্মান পাচ্ছি। আমি ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছি তৃণমূলে যোগদান করে। আমি যে দলে যোগদান করেছি, আমি চাইবো সেই দল আরো উন্নতি করুক। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের জন্য অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। তাই ওনার হাত শক্ত করতেই আমি মলয় ঘটক এর হাত ধরে এই দলে যোগদান করি। আর আমি এই দলে মানুষের জীবনের উন্নতির জন্য জন্য আপ্রাণ পরিশ্রম করবো।
No comments:
Post a Comment